নিজস্ব প্রতিনিধি:
সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধি ও শিশুদের ওপর পাশবিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে আবারও কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে, ‘প্রয়োজনে বিদ্যমান আইনকে আরও কঠোর করা হবে, । যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর কেউ সাহস না পায়।’
এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধর্ষকদের চেহারা যেন বার বার দেখানো ও প্রকাশ করা হয়। যাতে এ জঘন্য অপরাধীরা লজ্জা পায়।’ পাশাপাশি পুরুষ সমাজকেও ধর্ষকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নারীরা কেন একা প্রতিবাদ করবে। এ বিষয়ে পুরুষদেরও সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন।’
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার রাতে একাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় অংশ নিয়ে এ সব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
দৃঢ় কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘রাজনীতি করি দেশ ও দেশের মানুষের জন্য। দেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে হবে সেই রাজনীতি আমি করি না। আমার প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে দেশের উন্নতি ও দেশের মানুষের কল্যাণ। দেশের মানুষকে একটু সুন্দর জীবন দেয়াই আমার প্রধান লক্ষ্য।’
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, ‘আমাদের খরচ পড়ছে প্রতি ঘণমিটার ৬১ দশমিক ১২ টাকা। আর ধরছি মাত্র প্রতি ঘণমিটার ৯ দশমিক ৮০ টাকা। প্রতি ঘনমিটারে সরকারকে ভতুর্কি দিতে হচ্ছে ৫১ দশমিক ৩২ টাকা।’
দেশের স্বত্ব মুচলেখা দেয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ২০০০ ও ২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের ঘটনা তুলে ধরে বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিল ক্লিনটন বাংলাদেশে এসে ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রির জন্য চাপ দেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারও একই চাপ দেন। আমি তাদের স্পষ্ট করে জানাই, আগে আমাদের কত পরিমাণ গ্যাস রয়েছে, দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ৫০ বছরের গ্যাস রিজার্ভ রেখে যদি উদ্বৃত্ত থাকে তবেই আমি গ্যাস বিক্রি করতে রাজি।’
তিনি বলেন, ‘গ্যাস বিক্রিতে রাজি না হলেও খালেদা জিয়া গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসেন। নির্বাচনে আমরা বেশি ভোট পেলেও ২০০১ সালে ক্ষমতায় যেতে পারিনি। কারণ আমি রাজনীতি করি দেশ ও দেশের মানুষের জন্য। দেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় যেতে হবে সেই রাজনীতি আমি করি না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এনার্জি ছাড়া দেশের উন্নয়ন হয় না। এখন দেশের ৯৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছেন। আমরা যদি গ্যাস সরবরাহ করতে না পারি তবে দেশের উৎপাদন বন্ধ হবে, রফতানি কমে যাবে, দেশে হাহাকার সৃষ্টি হবে। যারা এ নিয়ে আন্দোলন বা সমালোচনা করে তারা কী দেশে এমন পরিস্থিতি হোক সেটাই চান?’
তিনি বলেন, ‘গ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের পুরোটা খরচই নেয়া উচিত। কিন্তু আমরা নিচ্ছি না। দেশের জনগণের স্বার্থে ও উন্নয়নে গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাত দুটোতেই বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে।’
ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে গ্যাসের মূল্য বেশি এমন অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে দু’দেশের তুলনামূলক মূল্যের চিত্র সংসদে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ভারতসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের তুলনায় বাংলাদেশে গ্যাসের মূল্য কম। বাংলাদেশে গৃহস্থালি খাতে যেখানে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য ১২ টাকা ৬০ পয়সা, সেখানে ভারতের মূল ৩০ থেকে ৩৭ রুপি। শিল্পে বাংলাদেশে ১০ টাকা ৭০ পয়সা, ভারতে ৪০ থেকে ৪২ রুপি, সিএনজি খাতে বাংলাদেশে ৪৩ টাকা, ভারতে ৪৪ থেকে ৫৩ রুপি এবং বাণিজ্যিক খাতে বাংলাদেশে ২৩ টাকা, সেখানে ভারতে ৫৮ থেকে ৬৫ রুপি। তবে ভারত থেকে আমাদের দেশে গ্যাসের দাম বেশি হলো কীভাবে?’