• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩৭ অপরাহ্ন

মেঘনা নদীতে অবাধে জাটকা ইলিশ শিকার ॥ ফেরি করে জাটকা বিক্রি

আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ২৩ মার্চ, ২০২১

মনিরুল ইসলাম মনির :
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে অবাধে জাটকা ইলিশ শিকার করছেন জেলেরা। শিকার করা জাটকা রিকশা ও ভ্যানে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় মৎস্য বিভাগের কোনো তৎপরতা চোখে পড়ছে না। এতে ইলিশ রক্ষার্থে সরকারের নেওয়া কর্মসূচি ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় সরকারি হিসাবে ৫২ হাজার জেলে রয়েছেন। অধিকাংশই মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের আলেকজান্ডার এলাকার মেঘনা নদীর ১শ’ কিলোমিটার পর্যন্ত ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ইলিশ উৎপাদন ও জাটকা সংরক্ষণের জন্য ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মৎস্য বিভাগ। এ নিষেধাজ্ঞার দুই মাস পরে মে-জুন আরও দুই মাসসহ চার মাস প্রত্যেক জেলে পরিবারকে ৪০ কেজি হারে প্রতি মাসে ভিজিএফের চাল দেওয়া হবে। নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকে প্রতিদিন জেলেরা মেঘনা নদীতে জাটকা নিধন করছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নদীতে টহল না দেওয়ায় তারা দিন-রাত প্রকাশ্যে এ কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এসব জাটকা গ্রামে গ্রামে ফেরি করে প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চলতি মৌসুমে নির্বিচারে জাটকা ধরার কারণে দেশে ইলিশের উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে এমনটাই মনে করছেন মৎস্য বিশেষজ্ঞরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট মেঘনা নদীর লক্ষ্মীপুর, রায়পুর, হাজীমারা, রামগতি, চাঁদপুর, কাটাখালী, নীলকমল ও মোহনপুর এলাকাকে বৃহৎ জাটকা বিচরণক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সারা বছর নদীতে কমবেশি জাটকা থাকলেও মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এর ভরা মৌসুম। এ মৌসুমে শেওলা জাতীয় খাদ্য খাওয়ার জন্য বিপুল পরিমাণ জাটকা দলবদ্ধভাবে নদী এলাকায় বিচরণ করে থাকে। চরউমেদ এলাকার জেলে সাজ্জাদ বলেন, আমি নদীতে মাছ ধরতে যাই পেটের দায়ে। আমার মতো অনেকে মাছ ধরে দিনে ও রাতে। সরকার অভিযানের আগে চাল দিলে আর নদীতে নামা হতো না। এখন বাধ্য হয়ে নদীতে নেমে মাছ ধরছি। কয়েকজন জেলে জাটকা নিধনের কথা স্বীকার করে বলেন, জেলেরা জীবন বাঁচাতেই চুরি করে জাটকা নিধন করছেন। জেলে নেতা ইমাম হোসেন জানান, দুই মাস নদীতে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে সরকার যে বরাদ্দ দিয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ, কমলনগরের লুধুয়া মাছঘাটের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী (আড়তদার) খুলনা অঞ্চল থেকে ট্রলারসহ জেলে ভাড়া করে এনে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বেহুন্দি জাল (নেট জাল) দিয়ে অবাধে জাটকা (ছোট ছোট ইলিশের পোনা) শিকার করেন। স্থানীয় লোকজন জানান, প্রশাসনের নাকের ডগায় পৌর শহর, গ্রামের বাজার ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফেরি করে জাটকা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও নদীর পাড়ের মাছঘাটে জাটকা ডাক তুলে বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে নিয়মিত। একইভাবে আড়ত খুলে বসেছে এলখলাছপুর ইউনিয়নের বোরোচর এলাকায়। মতলব উত্তর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম বলেন, জাটকা নিধন বন্ধে প্রতিদিনই নদীতে কোস্টগার্ড ও মৎস্য কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন জেলেকে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। জেলেদের বরাদ্দের ব্যাপারে তিনি বলেন, জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল বিতরণ করা হয়েছে। নিয়মিত মৎস্য বিভাগ নদী ও সড়কপথে পুলিশ, কোস্টগার্ডকে নিয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে।


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

ফেসবুকে মানব খবর…