• সোমবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৬ পূর্বাহ্ন

এ শোক সহিব কেমনে : আকবর হোসেন মনির

আপডেটঃ : বুধবার, ১ জুলাই, ২০২০

 

নিজস্ব প্রতিনিধি:
মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমন শুরুর পর থেকে অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে ফরিদগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গণ থেকে একে একে ঝরে গেলো চারটি নক্ষত্র।

ফরিদগঞ্জ পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোতাহার হোসেন রতন, উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সাংবাদিক আবুল হাসনাত, উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. শহীদ উল্ল্যা ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হাফেজ উদ্দিন আহম্মেদ কনক আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

জন্ম হলে মরিতে হইবে- এটা চির সত্য। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গণের অগ্রজ এই মানুষগুলোর একের পর এক চলে যাওয়া আমাকে ব্যাথিত করেছে। প্রিয় মানুষগুলোর চলে যাওয়ায় আমি গভীরভাবে শোকাহত। হে মহান রাব্বুল আলআমিন মরহুমের পরিবারের সদস্যদের এ শোক সহিবার তওফিক দাও।

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ওনারা ছিলেন অত্যন্ত নিবেদিত প্রাণ। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ যখনই বিরোধী দলে ছিলো তখনই সাবেক এই ছাত্রনেতারা বুক চিতিয়ে রাজপথে সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। ফরিদগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতির ইতিহাসে তাদের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

মো. মোতাহার হোসেন রতন : ফরিদগঞ্জে রাজনৈতিক অঙ্গণের পরিচিত মুখ মোতাহার হোসেন রতন। তিনি পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও, তিনি ১৯৯১ সালে ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগ মনোনীত এজিএস প্রার্থী (হাসনাত-ওয়াহিদ-মোতাহার পরিষদ) এবং ১৯৯৪ সালের নির্বাচনে (মোতাহার-আলমগীর-তছলিম পরিষদ) ভিপি প্রার্থী ছিলেন। তিনি ফরিদগঞ্জ কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি বিআরডিবি’র নির্বাচিত সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। গত শনিবার ২৮ জুন দিবাগত রাত ৩.৩০ মি. আমাদের সবাইকে ছেড়ে পরপারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তিনি। তিনি প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে এক মেয়ে, আত্মীয়-স্বজন, রাজনৈতিক সহকর্মী ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান। ফরিদগঞ্জের রাজনীতিতে উজ্জ্বল এই তারকা বিদায় নিলেও তার সকল কর্মকান্ড তাকে আমাদের মাঝে চিরস্মরণীয় করে রাখবে।

আবুল হাসনাত হাসেম : এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যাওয়ার মাত্র দুই ঘন্টা আগে নিজের ফেসবুক ওয়ালে মাফ চেয়ে একটি পোস্ট করেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, দুঃসময়ে রাজপথে আওয়ামী লীগের কান্ডারি আমার প্রিয় সাংবাদিক আবুল হাসনাত হাসেম। আমি তাকে কাকা বলে সম্বোধন করতাম। আমার ছাত্রলীগের রাজনীতির শুরুতে হাসনাত কাকার পরামর্শ ও উপদেশ রাজনীতিতে আমার এগিয়ে যাওয়ার পথে বেশ ভালো ভূমিকা রেখেছে। শুধু নিজ দল নয়, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী সহ সাধারণ মানুষ হাসনাত কাকাকে অত্যন্ত ভালো জানতেন, ভালোবাসতেন।

তবে, আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ কর্মী আবুল হাসনাত কাকা ব্যক্তি স্বার্থে দলীয় প্রভাব বিস্তার করে অর্থ সম্পদের পিছনে ছুটেননি। মৃত্যুর পূর্বে তিনি তার ফেসবুকে লিখেন, ‘আমার অবস্থা ভালো না। আমাকে সবাই মাফ করে দেবেন। আমার সন্তানদের একটু দেখবেন। আমিন’। এই মহুর্তে দলীয় নেতাকর্মী সহ সকলের কাছে অনুরোধ সাংবাদিক আবুল হাসনাত কাকার দুই ছেলে সন্তানের শিক্ষা জীবন নিশ্চিত করা ও পরিবারটিকে আর্থিকভাবে সহায়তার জন্য সকলে এগিয়ে আসুন।

ইতোমধ্যে আমার অভিভাবক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. জাহিদুল ইসলাম রোমান ভাই সাংবাদিক আবুল হাসনাত কাকার বাসায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানিয়ে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন।

উল্লেখ্য, সাংবাদিক আবুল হাসনাত হাসেম প্রেসক্লাব ফরিদগঞ্জের দপ্তর সম্পাদক ও দৈনিক চাঁদপুর জমিন পত্রিকার ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ও ফরিদগঞ্জে উপজেলা আওয়ামী গুণিজন স্মৃতি সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এছাড়া, ১৯৯০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ফরিদগঞ্জ উপজেলা শাখার আহবায়ক এর দায়িত্ব পালন করেন।

ডা. শহীদ উল্ল্যাহ : অত্যন্ত বিনয়ী ও স্বজ্জন মানুষ ছিলেন ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. শহীদ উল্ল্যা। নৌকাই ছিলো তার শুরু এবং শেষ কথা। গত ৩ জুন বুধবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে অ্যাম্বুলেন্স ঢাকা নেওয়ার পথে মৃত্যু বরণ করেন তিনি। ফরিদগঞ্জে আওয়ামী লীগের বরেণ্য এ নেতা মিত্যুর পূর্বে বেশ কিছুদিন ধরে জ্বর সহ অন্যান্য রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুর সময় তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক ছেলে সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

হাফেজ উদ্দিন আহম্মেদ কনক : ফরিদগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুঃসময়ের কান্ডারি ছিলেন হাফেজ আহাম্মেদ কনক। সাবেক এ ছাত্রলীগ নেতা মানুষের বিপদে-আপদে এবং সামাজিক নানা কর্মকান্ডে অগ্রভাগেই থাকতেন। ফরিদগঞ্জের রাজনীতিতে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে আমি মনে করি।

উল্লেখ্য, হাফেজ উদ্দিন আহম্মেদ কনক পেশায় ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তিনি ১৯৯১ সালে ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারি ডিগ্রি কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচনে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এছাড়া, তিনি ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারি ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ফরিদগঞ্জের কৃতি সন্তান মরহুম জাকারিয়া চৌধুরীর খালাতো ভাই হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ কনক আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।

মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই সন্তান সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান তিনি। তার সহধর্মীনি নয়ারহার্ট ডিগ্রী কলেজের লাইব্রেরিয়ান হিসেবে কর্মরত।

এছাড়া, ৬নং গুপ্টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ভ্রদ্রের স্ত্রী, উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক কামাল পাঠানের মা, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সাজ্জাদ হোসেন মা সহ আরো অনেক প্রিয় মানুষ, আত্মীয় স্বজন এই মহামারি করোনার মধ্যে ইন্তেকাল করেছেন। আমি সকলের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। আর যারা করোনা ভাইরাস সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন মহান সৃষ্টি কর্তার কাছে তাদের প্রত্যেকের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।
লেখক পরিচিতি : আকবর হোসেন মনির, সম্ভাব্য মেয়র পদপ্রার্থী, ফরিদগঞ্জ পৌরসভা, যুগ্ম আহ্বায়ক: ফরিদগঞ্জ উপজেলা যুবলীগ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক : ফরিদগঞ্জ পৌরসভা ছাত্রলীগ।


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

ফেসবুকে মানব খবর…