• সোমবার, ২৫ মার্চ ২০২৪, ১২:৫৮ পূর্বাহ্ন

ফরিদগঞ্জে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে

আপডেটঃ : শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১

গাজী মমিন, ফরিদগঞ্জ:
মানুষের খাদ্য তালিকায় মাংসের পরে স্থান পেয়েছে মাছ। মাছ পুষ্টিগুণ থেকে আমাদের শরীরের বিভিন্ন ভিটামিনের অভাব পূরণ করে। এরমধ্যে মলা-ঢেলা প্রভৃতি ছোট মাছের মধ্যে অন্যতম যা চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে।
সম্প্রতি ফরিদগঞ্জ পৌর সদরসহ ১৫টি ইউনিয়নের হাটবাজারগুলোতে দেশীয় প্রজাতির নানা ধরনের মাছ এখন বিলুপ্তের পথে রয়েছে। নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ অনেকটা দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে এ উপজেলায়। এখানকার গ্রামাঞ্চলের নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর, জলাশয়, ডোবা ও বিল-ঝিল দীর্ঘ দিন যাবত খনন না করায় এবং বেয়ালসহ নিষিদ্ধ বিভিন্ন প্রকারের জাল ব্যবহার করে নির্বিঘ্নে ছোট-বড় মাছ ধরার মহোৎসব চলায় এ দুর্দশার সৃষ্টি হয়েছে।
বর্ষা মৌসুমে ডিমওয়ালা মাছ ডিম ছাড়ার আগেই বেয়াল জালে ধরা পড়ছে। ফলে মাছের বংশ বিস্তার হচ্ছে না। এক শ্রেণীর অসাধু জেলেরা মাছ ধরার জন্য বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়ে অবাধে মাছ শিকার করছে। যার কারণে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দেশীয় প্রজাতির মাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার গ্রাম্য অঞ্চলের বিভিন্ন বিলের মাছের ক্ষেত্রগুলো এখন শূণ্য প্রায়। আগের মতো এখন আর বোয়াল, মাগুর, শিং, কৈ, টেংরা, শোল, টাকি, পুঁটি, গজার, চাপিলা, খৈইলশা, পাবদা, আইড়, চিংড়ি, মলা, বাইন, বেলেসহ অর্ধশতাধিক প্রজাতির মাছের দেখা মেলে না। এসব মাছ বিলুপ্ত হওয়ার পথে রয়েছে। বিশেষ করে উপজেলা জুড়ে ডাকাতিয়া নদীর মাছ হিসেবে পরিচিত পোয়া,শোল, আইড় মাছের দেখা এখন অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার।

উপজেলার মৎস্যজীবি ও সচেতন ব্যক্তিরা জানান, নিষিদ্ধ ঘোষিত জালের অবাধ ব্যবহার কৃষি জমিতে সার ও কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহার, বর্ষাকালে প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মা মাছের পোনা নিধন, শুষ্ক মৌসুমে মাছ ধরার প্রবণতা এবং মাছের বিচরণ ক্ষেত্র কমে যাওয়াসহ প্রভৃতি কারণে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক মৎস্য সম্পদ আজ বিলুপ্ত হতে চলছে।

গত কয়েকবছর আগে গ্রামাঞ্চলে সর্বত্র দেশি প্রজাতির মাছ পাওয়া গেলেও এখন আর সেই অবস্থা নেই। হাটবাজারগুলোতে চাষকৃত কার্প জাতীয় রুই, কাতলা, পাঙ্গাশ, আফ্রিকান মাগুর, হাইব্রিড শিং, মাগুর এবং থাই পঁটি, কৈ, ও তেলাপিয়াসহ নানা ধরনের মাছ বিক্রি হচ্ছে। চাষকৃত মাছের কাছে দেশি প্রজাতির মাছ টিকতে না পেরে হারিয়ে গেছে। যদিও মাঝে মধ্যে কিছু মাছ বাজারে পাওয়া যায় তাও দাম চওড়া। প্রতি কেজি টেংরা, পুঁটিসহ অন্যান্য মাছ ৪০০ থেকে ১০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া মাছের প্রজনন মৌসুম ও পোনা মাছের বৃদ্ধিকালীন সময় অবাধে ছোট বড় মাছ ধরা এবং মৎস্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় দেশীয় প্রজাতির মৎস্য সম্পদ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। মৎস্য অধিদপ্তরের যথাযথ আইন প্রয়োগের মধ্যদিয়ে দেশীয় প্রজাতির মৎস্য সম্পদ রক্ষা করা যেতে পারে বলে সচেতন মহলের দাবী।
জেলেরা জানান, দারিদ্র্যতার কারণে তারা মাছ শিকার করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই বিষয়ে মৎস্য অধিদফতর কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে না। নদী-নালা, খাল-বিল পুনঃখনন এবং সমন্বিত মৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ গ্রহণ, কৃষি জমিতে স্বল্পমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার এবং প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধ করা হলে জাতীয় মৎস্য সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন সচেতন লোকজন।
দেশি মাছ বিলুপ্তি হলে এ উপজেলায় প্রায় পাঁচ শত জেলে পরিবারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। কাজেই এ ব্যাপারে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন উপজেলাবাসী।


এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

ফেসবুকে মানব খবর…